শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন: কেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোটাররা

যুক্তরাজ্যে নির্বাচন: কেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোটাররা

স্বদেশ ডেস্ক:

যুক্তরাজ্যে পাঁচ বছরের কম সময়ের মধ্যে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ৬৫০টি সংসদীয় আসনের ভোট কেন্দ্রগুলোতে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটাররা এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্রের দিকে যাওয়া শুরু করেছেন। খবর বিবিসির

ভোটগ্রহণ শেষ হবে রাত ১০টায়। সঙ্গে সঙ্গেই ভোট গণনা শুরু হবে। শুক্রবার সকালে প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অধিকাংশ ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

এর আগে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দুইবারই নির্বাচিত পার্লামেন্ট পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেনি।

প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। ১৯২৩ সালের পর দেশটিতে এই প্রথম ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রত্যেকটি আসনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। এভাবে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ জন এমপিকে বেছে নেওয়া হবে।

মূলত পাঁচ ইস্যু সামনে রেখে এবার ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। অবধারিতভাবে যার প্রধান ইস্যু হলো ব্রেক্সিট।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রেক্সিটের পক্ষেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। ভোটারদের প্রতি দলটির বার্তা পরিস্কার। তারা আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে যেতে চায়। সাড়ে তিন বছরেও ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে না পারার ব্যর্থতা এবার কাটিয়ে উঠতে চায় দলটি। এই চলমান অচলাবস্থাও কাটাতে চায় জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি।

কিন্তু ব্রেক্সিট ইস্যুতে জেরেমি করবিন নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির অবস্থান একাট্টা নয়। দলটি মোটা দাগে ব্রেক্সিটবিরোধী। অবশ্য তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়টি পরিস্কার নয়। বিশ্নেষকরা বলছেন, ব্রেক্সিটপন্থিদের ভোট হারাতে না চাওয়ার কারণেই দলটির এই কৌশল। তবে লেবাররা ‘নরম ব্রেক্সিট চুক্তি’র কথা বলেছে। সেই সঙ্গে এই ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের কথাও বলেছে তারা।

অন্যদিকে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা (লিব ডেম) বরাবরই ব্রেক্সিটবিরোধী অবস্থানে থেকে প্রচার চালিয়েছে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বা এনএইচএস। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৪৮ সালে গড়ে তোলা হয় এনএইচএস।

কনজারভেটিভরা যেমন ব্রেক্সিটেরে ওপর জোর দিয়েছে, তেমনি এই নির্বাচনে লেবাররা প্রচার চালিয়েছে এনএইচএসকে কেন্দ্র করে। করবিনের দল সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায়। এই খাতে দলটি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।

তবে জনসনের বিরুদ্ধে এনএইচএসকে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বিক্রি’ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন করবিন। জনসন সে অভিযোগ অস্বীকার করে নতুন নতুন হাসপাতাল বানানোর অঙ্গীকার করেছেন। হাসপাতালগুলোতে জনবল বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটসহ অন্য দলগুলোও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছে।

অর্থনীতির বিষয়টি তৃতীয় ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে। কনজারভেটিভরা বরাবরই নিজেদের ব্যবসাবান্ধব দল হিসেবে অভিহিত করে।

তবে জনসনের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থা ব্যবসায়ীদের কিছুটা ভীত করে তুলেছে। অনেক বিশ্নেষক বলছেন, জনসনের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী ‘শক্ত ব্রেক্সিট’ ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী জনসনের দাবি, ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে বরং দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে।

অন্যদিকে লেবার পার্টি চায় অর্থনীতি শুধু ধনীদের হাতে বন্দি না থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত হোক। দলটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত সরকারীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শীর্ষ পাঁচ শতাংশ ধনীর কর বাড়ানোর কথা উল্লেখ করেছে ইশতেহারে। এতে শীর্ষ ধনীরা কিছুটা আতঙ্কিত হলেও বিষয়টি সাধারণ মানুষের পক্ষে গেছে।

চতুর্থ ইস্যু জলবায়ু নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব গ্রিন পার্টি। দলটির নেতা ও পার্লামেন্টে একমাত্র সদস্য ক্যারোলিন লুকাস বলেছেন, গ্রিন পার্টি সরকার গঠন করলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনবে। লেবার পার্টি বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তারাও ব্রিটেনকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করবে। সে ক্ষেত্রে লিব ডেমের লক্ষ্য ২০৪৫ সাল। তবে কার্বন নিঃসরণের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে কনজারভেটিভরা। দলটি ২০৫০ সালের মধ্যে ব্রিটেনকে কার্বণ নিরপেক্ষ দেশ বানাতে চায়। আর পঞ্চম ইস্যু হিসেবে দলগুলো ব্রিটেনের ঐক্যবদ্ধতার ওপর জোর দিয়েছে। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের বিষয়টি ফের সামনে আসায় দলগুলোকে এ বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877